• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

যে সন্ধি মুসলমানদের আপাতত হার হলেও ভবিষ্যৎ জয় ছিল

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৪  

ষষ্ঠ হিজরি সাল নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে আসছিল। হঠাৎ এক রাতে মহানবী (সা.) একটি সুন্দর স্বপ্নে দেখলেন, মুসলমানরা মসজিদুল হারামে (পবিত্র কাবাঘরের চারদিকে) হজের আনুষ্ঠানিকতাগুলো পালন করছে। তিনি এ স্বপ্নের কথা সাহাবিদের বললেন এবং একে একটি শুভ আলামত মনে করে বললেন, খুব শিগগিরই মুসলমানরা তাদের মনের আশা পূরণে সক্ষম হবে।

কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি মুসলমানদের ওমরাহের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং মদিনার আশে-পাশের যেসব গোত্র তখনও মূর্তিপূজক ছিল, তাদেরও আহ্বান জানালেন মুসলমানদের সফরসঙ্গী হতে। এ খবর হিজাযের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল যে, মুসলমানরা জিলকদ মাসে ওমরাহের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাচ্ছে।

এ বছর এক হাজার ৪০০ জন সাহাবিকে নিয়ে ওমরা পালনের জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু হুদাইবিয়া নামক স্থানে কোরাইশরা তাদের বাধা দেয়।

এরপর দুপক্ষে আলোচনা শুরু হয়। কোরাইশদের পক্ষ থেকে আলোচনা করতে আসেন সুহাইল বিন আমর। সেখানে যে চুক্তি হয়, সেটিই ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। চুক্তিতে লেখা প্রধান শর্তগুলো হলো:

 

  • মদিনার মুসলমান ও মক্কার কোরাইশদের মধ্যে দীর্ঘ দশ বছর পর্যন্ত সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকবে।

  • এই বছর মুসলমানেরা ওমরাহ না করেই মদিনায় ফেরত যাবেন। আগামী বছর তারা মক্কায় আগমন করতে পারবেন। এ সময় তারা সাথে তীর ও বর্শা আনতে পারবেন না। আত্মরক্ষার জন্য শুধু কোষবদ্ধ তলোয়ার সাথে রাখতে পারবে।

  • মক্কায় তারা কেবল তিন দিন অবস্থান করতে পারবেন। তিন দিন পার হওয়ার সাথে সাথে মক্কা থেকে বের হয়ে চলে যেতে হবে।

  • এই দশ বছরের মধ্যে মক্কার কোনো লোক যদি মুসলমান হয়ে মদিনায় আশ্রয় নেয় তাহলে মদিনার অধিবাসীগণ তাকে আশ্রয় দিবে না। পক্ষান্তরে মদিনার কোনো লোক যদি মক্কায় চলে আসে তাহলে মক্কাবাসীগণ তাকে মদিনায় ফেরত দিবে না।

 

চুক্তির এই শেষ শর্তটি মেনে নেয়া মুসলমানদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। তারা নবীজি (সা.)-এর কাছে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর নবী, আমরা কি এই শর্তটিও মেনে নিব?

নবীজি (সা.) বললেন, তাদের যে লোক মুসলমান হয়ে আমাদের কাছে চলে আসবে, আমরা তাকে তাদের নিকট ফেরত দিব। আল্লাহ তাআলা তার কোনো না কোনো ব্যবস্থা করবেন।

চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর নবীজি (সা.) সবাইকে আদেশ দিলেন যে, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও, কোরবারি করে ফেল এবং মাথা কামিয়ে ফেল।

চুক্তির পর কোরাইশরা মুসলমানদের সঙ্গে ওঠাবসা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার সময় মুসলমানদের সততা ও চারিত্রিক পবিত্রতা লক্ষ্য করে।

সুরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়াতে সাহাবিদের কয়েকটি গুণের উল্লেখ রয়েছে। এসব গুণের কথা তাওরাত ও ইঞ্জিলেও আছে। গুণগুলো হলো :
 

  • তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর

  • নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মী

  • রুকু-সিজদায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিয়োজিত

  • তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন দীপ্তিমান

  • তাদের দৃষ্টান্ত মাটি থেকে নির্গত কিশলয়ের মতো যা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে কাণ্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে কৃষকের জন্য আনন্দের কারণ হয়।

কাবা শরিফ জিয়ারত না করাসহ চুক্তির কয়েকটি ধারায় আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের দুর্বল বলে মনে হয়। কিন্তু আল্লাহ একে ফাতহুম মুবিন বা সুস্পষ্ট বিজয় বলে ঘোষণা দেন। এই বক্তব্য কিছু মুসলমানের তখন বোধগম্য হয়নি। কারণ ঘটনাটি ঘটেছিল ষষ্ঠ হিজরিতে। আর আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দান করেছিলেন অষ্টম হিজরিতে।

অর্থাৎ পরবর্তী পরিস্থিতি প্রমাণ করে প্রকৃতপক্ষেই চুক্তিটি ছিল সুস্পষ্ট বিজয়। হুদাইবিয়ার সময় মুসলমানরা সংখ্যায় ছিল ১,৪০০। এর মাত্র দুবছর পরই অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের সময় রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে মুজাহিদের সংখ্যা হয় দশ হাজার। শান্তিচুক্তির ফলে এ বিপ্লব সাধিত হয়েছিল।

আজকের খুলনা