• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

বিয়ের বছর পার না হতেই লাশ হয়ে ফিরলো রূপসার প্রিয়ন্তী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৪  

বিয়ের বছর পার না হতেই লাশ হয়ে ফিরলো রূপসা উপজেলার তালিমপুর গ্রামের দিলীপ দে’র কিশোরী কন্যা প্রিয়ন্তী দে (১৭)। শনিবার যশোরে শ^শুর বাড়িতে প্রিয়ন্তীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার  মৃত্যু নিয়ে শ^শুর বাড়ির লোকজনের অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহের দানা বাঁধছে। শ^শুর বাড়ি থেকে গতকাল রোববার বিকেলে রূপসায় বাবার বাড়িতে তার লাশ পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকাবাসীর মাঝেও শোকের ছায়া নেমে আসে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই যশোরের বড় বাজার চুরিপট্টি এলাকার নিতাই লাল দে’র ছেলে নয়ন দে’র সাথে রূপসার তালিমপুর গ্রামের দিলীপ দে’র দশম শ্রেণি পড়–য়া কন্যা প্রিয়ন্তির বিয়ে হয়। বিয়ের আগে ছেলের বাবা-মা প্রিয়ন্তিকে কন্যার স্নেহে রাখার কথা বললেও বিয়ের পর তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সংসারের বোঝা। পাশাপাশি পিত্রালয়ের আত্মীয়-স্বজনের সাথে তার সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি শ^শুর বাড়ির প্রতিবেশীদের সাথে মেলামেশা নিয়েও তার উপর ছিলো বিধিনিষেধ। এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝে স্বামী-সংসার সামলে প্রিয়ন্তী এবার এসএসসিতে বি-গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। 


মা দুলালী দে বলেন, ১৩ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রিয়ন্তীর শ^শুর নিতাই লাল দে আমাকে ফোন করে বলে ওর গ্যাসপাম করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি তোমরা আসো। খবর পেয়ে মা ও ঠাকুরমা দুপুরে যশোর হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারে প্রিয়ন্তী মারা গেছে। তবে লাশ দেখার ভাগ্য জোটেনি তাদের কপালে। এমনকি কি কারণে প্রিয়ন্তীর মৃত্যু হয়েছে জানতে পারেনি তারা। পরে ময়না তদন্ত শেষে বিকেলে তারা লাশ নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে।


মা দুলালী দে আরো বলেন, আমার মেয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে শ^শুর বাড়িরে লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এসব অভিযোগ নিয়ে আমি যেন তাদের সাথে আলোচনা না করি সে ব্যাপারে আমাকে বার বার সতর্ক করতো। বলতো আমি তোমাদের বলেছি জানতে পারলে নির্যাতন আরো বাড়বে। তিনি বলেন, আমার মেয়ের এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু না। তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। 
প্রিয়ন্তীর মেশো বিজন কুমার দত্ত বলেন, নয়নের বাবার অনুরোধে আমি থেকে ওর বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের আগে ওরা আমাদের মেয়েকে যেভাবে রাখার কথা বলেছিলো বিয়ের পর তার সব উল্টো করে। একের পর এক নির্যাতনের পর প্রিয়ন্তীকে ওরা মেরে ফেলেছে। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ঠাকুর মা বলেন, জুন মাসের প্রথম দিকে প্রিয়ন্তী ওর স্বামী নয়নকে নিয়ে আমাদের এখানে বেড়াতে এসেছিলো। যাওয়ার সময় নয়ন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রিয়ন্তীকে সকলের সামনে শাসিয়ে বলে আমার উপরটা দেখেছো, ভিতরটা দেখনি। এবার থেকে দেখাবো। এভাবে হুমকি দিয়ে নয়ন প্রিয়ন্তীকে নিয়ে চলে যায়। এরপর জীবন্ত প্রিয়ন্তীর আর বাবার বাড়ি আসা হলো না। ফিরলো লাশ হয়ে। প্রিয়ন্তীর অকাল মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা এই অকাল মৃত্যু কেউ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা। তার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। 

আজকের খুলনা