• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

কয়রায় লবণ পানিতে সর্বস্বান্ত চাষিরা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৪  

খুলনার কয়রায় লবণ পানির চিংড়ি চাষের কারণে সর্বস্বান্ত জমির মালিকরা চিংড়ি চাষের পরিবর্তে কৃষিতে ফিরে যেতে চান।

জমির মালিকরা জানান, জমি থাকলেও লবণ পানির চিংড়ি চাষের কারণে অন্য কোনো ফসল না হওয়ায় তাদের চাল কিনে খেতে হয়। সে জন্য তারা এখন লবণ পানির চিংড়ি চাষের পরিবর্তে কৃষিতে ফিরে যাবেন। লবণ পানির আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

জানা গেছে, দেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন অধু্যষিত উপকূলীয় জনপদ খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় আশির দশকে কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলন করে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। লবণ পানি উত্তোলনের জন্য পোল্ডার অনুমোদন না থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গোপন আতাত করে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে ঘের মালিকরা অবৈধভাবে পাইপ বসিয়ে কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলন করে চিংড়ি চাষ অব্যাহত রেখেছে। যার কারণে জমিতে চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। আর ফসল উৎপাদন না হওয়ায় জমির মালিকদের জমি থাকলেও চাল কিনে খেতে হয়।
উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানি উত্তোলন বন্ধের জন্য সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান আশির দশকের শেষের দিকে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। সে জন্য বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। শিকার হতে হয়েছে জেল-জুলুম, হামলা ও মিথ্যা মামলার। তারপরেও তিনি জনতার দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছু হটেননি। প্রভাবশালী ঘের মালিকদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। জনশ্রম্নতি রয়েছে যার পুরস্কার হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে সংসদ সদস্য ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ২০২৫ সালে ঘেরে লবণ পানি উত্তোলন না করার জন্য।
উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের আছাবুর রহমান বলেন, 'লবণ পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি, লবণ পানির সঙ্গে জীবনযাপন করা খুব কঠিন। তার পরেও বাপ-দাদার জন্মভিটা ছেড়ে যাব কোথায়।'
 

জমির মালিক ও লবণ পানি বিরোধী আন্দোলনের নেতা নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, 'লবণ পানি ফসল ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন লবণ পানির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সংসদ সদস্য মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এলাকা লবণ পানি মুক্ত ঘোষণা করেছেন। সেখানে লবণ পানির মাছ চাষের পরিবর্তে ধান চাষ করছে জমির মালিকরা।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, 'অবৈধভাবে পাউবোর বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে লবণ পানি উত্তোলনকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী পাইপ অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেন, 'হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জনগণ লবণ পানি উত্তোলন বন্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা এখন লবণ পানির চিংড়ি চাষের পরিবর্তে কৃষিতে ফিরতে চান। একসময় গোলা ভরা ধান, গোয়ালভরা গরু ও পুকুরভরা মাছ ছিল, এখন সেটা আর দেখা যায় না। আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি চিংড়ি ঘেরের বিরুদ্ধে নই। পুষ্টি চাহিদা মেটাতে মৎস্য বা চিংড়ি আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু সেটা কৃষি ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করে নয়। লবণ পানির জায়গা নদী-সাগরে সেখানেই থাকুক। জনবসতি ও ফসিল এলাকায় নয়।'

আজকের খুলনা