• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

পাইকগাছায় লবণ ও মিষ্টি পানি ইস্যুতে দু’টি পক্ষের সভা মাঠ গরম

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২৪  

খুলনার পাইকগাছায় মিষ্টি পানি ও লবণ পানির ইস্যুতে দু’টি পক্ষই এখন মাঠে। পক্ষ দু’টির পক্ষে চলছে সভা সমাবেশ ও কমিটি গঠন। পাইকগাছা কয়রার সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান নির্বাচনকালে ও পরবর্তীতে সংসদ থেকে শুরু করে মাঠে ময়দানে বিভিন্ন সভা সমাবেশে লবণ পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য-ফসল উৎপাদনের উপর জোরালো বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে লবণ পানির পক্ষে উপজেলা চিংড়ি সমবায় সমিতির ব্যানারে অবস্থান নিয়ে লবণ পানির বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। দু’টি পক্ষই মাঠ গরম করে রেখেছেন। 
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে উপকূলীয় এলাকায় লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য ফসল চাষ ও সুপেয় পানির দাবি জোরালো হয়েছে। সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান সংসদের প্রথম বক্তব্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী লবণ পানির ক্ষতিকারক দিক ও মিষ্টি পানিতে মৎস্য চাষ ও বহুমুখি ফসল উৎপাদনের যুক্তিকতা তুলে ধরলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এনিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের কমিটি গঠন করে জনমত গঠনে মাঠে কাজ করছে একটি পক্ষ। অপরদিকে লোনা পানির চিংড়ি চাষ ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে এমন অভিযোগ এনে ঘের মালিকরা উপজেলা চিংড়ি চাষী সমিতির ব্যানারে পাল্টা অবস্থান নিয়ে গত ২৭ জুন মতবিনিময় সভা করে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। 
সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর এবং উপজেলা চিংড়ি চাষী সমিতির উপদেষ্টা, ঘের মালিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু লবণ পানির চিংড়ি চাষ আর্শীবাদ মনে করে অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার ঘোষণা দেন। নেতৃবৃন্দ সংসদ সদস্যদের লোনা পানির চিংড়ি ঘের বন্ধের ঘোষণা অশুভ তৎপরতা উলে­খ করে বলেন, আমাদের পেটে লাথি মারলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। মতবিনিময় সভার বক্তব্য এলাকার চা-স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। মিষ্টি পানির সমর্থকরা মতবিনিময় সভার বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি-তর্ক তুলে ধরেছেন। 
মিষ্টি পানির পক্ষে বক্তারা বলেন, এখন সমাজের বেশির ভাগ মানুষের দাবি পরিবেশ বিধ্বংসী লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে ধান-মাছ চাষের ক্ষেত্র তৈরি করা হোক। দেশের অর্থনীতিতে ২য় চিংড়ি খাতকে প্রচার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তী ছড়ানো হচ্ছে। সামাজের ধনী বা বড় জমির মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ শ্রেণি স্বার্থ রক্ষায় লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। উপজেলা লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার মন্ডল জানান, চিংড়ি চাষ শুরুতেই পরিবেশ বিপর্যয় ঘটায়। শুরুতে ঘের মালিকরা মৎস্য ঘেরে কৃষকদের ধান লাগানোর সুযোগ দিত। এখন সে চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে ঘের মালিকরা ধান চাষ না করে নিজেদের মুনাফা লাভের আশায় সারা বছর জমিতে লবণ পানিবদ্ধ করে ফসল হানি করে পরিবেশ নষ্ট করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ কেটে ব্যক্তিগত ও সরকারি স্লুইস গেট দিয়ে পোল্ডারে লবণ পানি উত্তোলন জনগণের সম্পদ ধ্বংস করছেন। এতে খাদ্য ঘাটতি, পরিবেশ বিপর্যয়সহ গাছ-পালা ও দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস হয়েছে। তিনি এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য ও ফসল উৎপাদন লাভজনক মনে করে সভা সমাবেশ করছেন। 
পাইকগাছা প্রেসক্লাব সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী এড. এফএমএ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০০/১০০ বা ৫০ বিঘার জমির ধনী পরিবার বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি স্লুইস গেট ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থে লবণ পানির চিংড়ি ঘের করে সমাজ নিয়ন্ত্রণ করবে এটা হতে পারেনা, আর চলতে দেওয়াও ঠিক না। তিনি আরোও বলেন, সাবেক এমপি মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু লবণ পানি বিরোধী অবস্থানে ছিলেন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও চিংড়ি চাষি সমিতি ও ঘের মালিকরা ২৩ সালের পর থেকে লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য ও ফসল উৎপাদন করবেন বলে ঐক্যমতে পৌঁছান। সেটা তারা ভুলে গিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন কেন
দেলুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক সময় লবণ পানির চিংড়ি চাষ ইতিবাচক হলেও এখন তা ঝুঁকিপূর্ণ ও অলাভজনক। টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনার দাবি করে তিনি কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে সমন্বিত চাষ পদ্ধতির কথা উলে­খ করে আরোও বলেন, মিষ্টি পানিতে মৎস্য-ফসল উৎপাদন খুবই লাভজনক, যা দেলুটি ইউনিয়নের কৃষকরা আমন ও রবি মৌসুমে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করে প্রমাণ দেখিয়েছে। 
(খুলনা-৬) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত  আমি কোথাও বলেনি ঘের হবেনা। শুধু লোনা পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানির চাষ পদ্ধতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেছি। নির্বাচনকালে ও পরবর্তীতে সংসদ থেকে শুরু করে মাঠে ময়দানে লবণ পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মৎস্য-ফসল উৎপাদনের উপর জোর দিয়েছি। এর সাথে টেকসই ভেড়িবাঁধসহ সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনার কথা বলে আসছি। যা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীও অবহিত। অধিকাংশ মানুষের দাবিকে বাঁধাগ্রস্ত করতে এক শ্রেণির ঘের মালিকরা ক্ষমতাবলে সরকারি সম্পদের ক্ষতি নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মাঠে নামার প্রছন্ন হুমকি দিচ্ছেন। কোথাও এক ইঞ্চি পতিত জমি রাখা যাবেনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঘোষণা বাস্তবায়ন ও মিষ্টি পানিতে মৎস্য ও বহুমুখী ফসল উৎপাদন করতে পোল্ডারে লোনা পানির বন্ধের ঘোষণা বাস্তবায়নের তিনি সর্ব সাধারণকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন। 
এদিকে লবণ পানি ও মিষ্টি পানির বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সর্বত্রই আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। আলোচনার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে লবণ পানি না মিষ্টি পানি? কোনটা আমাদের জন্য আশির্বাদ বয়ে আনবে। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এক সময় ছিল পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু এবং গোলাভরা ধান। কিন্তু ৮০ দশকে শুরু হয় সাদা সোনা চিংড়ি চাষ। আমরা কি আবার ফিরে যাব সেই আগের অবস্থানে, নাকি বর্তমানের অবস্থানে থাকবো। শুধু অপেক্ষার পালা।

আজকের খুলনা