• সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৩ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বুড়ি ভদ্রা নদীতে ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৪  

খুলনার ডুমুরিয়ায় উপজেলায় বুড়ি ভদ্রা নদীর চাঁদগড়-জালিয়াখালী ও বারআড়িয়া-শম্ভুনগর থেকে শৈলমারী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বিপুল ফসলি জমি, শত শত বসতভিটাসহ নানা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। 
খুলনা পাউবোর প্রকৌশলীদের ভাষ্যমতে, সুন্দরবনের শিবসা নদী হয়ে খুলনার ডুমুরিয়া-বাটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান হাবড়খালী, দেলুটি, গ্যাংরাইল ও ভদ্রা নদীর চতুর্মোহনা। পাউবোর ২৯ নম্বর পোল্ডারের ডান তীর ঘেঁষে ভদ্রা নদী। জোয়ারের সময় পানি চার ভাগে বিভক্ত হয়ে ওই পোল্ডারের ডান তীরে প্রবল বেগে আঘাত করার কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এদিকে ভদ্রা নদীর অন্যপ্রান্তে পলি জমে বিশাল চর জেগে উঠেছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।   
জানা গেছে, বুড়ি ভদ্রায় ভাঙন ঠেকাতে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সাত বছর মেয়াদে নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে ডেলটা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯ নম্বর পোল্ডারের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ভাঙন রোধে বড় ধরনের কাজ করা সম্ভব হয়নি। 
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বারআড়িয়া থেকে শম্ভুনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভদ্রা নদীতে বিস্তৃত ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভদ্রা নদীর পানির তোড়ে প্রতিবছর কোথাও না কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়। গত ৪৮ বছরে পাউবোর পক্ষ থেকে ভাঙনপ্রবণ এলাকায় ২১ বার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। 
স্থানীয় শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে, কয়েক দশকের ভাঙনে কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্লুইসগেটসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ও অসংখ্য বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিবার ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। ফসলি জমি হারিয়ে কয়েক হাজার বাসিন্দা কর্মসংস্থানের অভাবে এলাকা ছেড়ে খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। 

জালিয়াখালী গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান শেখ, চাঁদগড় গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল করিম শেখ জানান, তাদের এলাকায় প্রতিটি পরিবারের ৩০ থেকে ৯০ বিঘা ফসলি জমি ছিল। ভিটাবাড়িসহ সবকিছু নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যের জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। 
শম্ভুনগর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ দরিদ্র শিপ্রা মণ্ডল ও পূর্ণিমা মণ্ডল জানান, তাদের বসতভিটা তিনবার নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ঘর তুলে বসবাস করছেন। 
বারআড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার গোলদার, কৃষক হোসেন আলী ও পরিমল মণ্ডল জানান, বারআড়িয়া ও শম্ভুনগরে সাম্প্রতিক ভাঙনে ৩১৬ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে বারআড়িয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি মন্দির ও  দুই শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। এলাকার অনেক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।  
চাঁদগড় গ্রামের স্কুলশিক্ষক আছাবুর রহমান জানান, নদীভাঙনের ফলে এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জোয়ারের সময় লোকালয়ে নোনাপানি প্রবেশ করায় পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। 

জালিয়াখালী-চাঁদগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর শেখ বলেন, ১৯৮৮ সালে স্থাপিত তাদের বিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত তিনবার নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে নদীর চরে টিনের ছাউনিতে শিশুদের পাঠদান চলছে। চিংড়ি ঘেরের বাঁধ বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। 
শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি বলেন, চাঁদগড়, জালিয়াখালী, শৈলমারী, শম্ভুনগর, বকুলতলা ও বারআড়িয়া– এ ছয়টি গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণ জরুরি। যে কোনো সময় দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার ডুমুরিয়া সদরসহ শরাফপুর, ভান্ডারপাড়া ও সাহস– এই চারটি ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হবে। বিনষ্ট হবে হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, বুড়ি ভদ্রার ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় জিআই ব্যাগ (বালিভর্তি বস্তা) ফেলা হচ্ছে। ভাঙন এলাকায় সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। চাহিদামতো অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। 
ডুমুরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-অমিন বলেন, ভাঙন এলাকায় পরিদর্শন করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা