• সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৩ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

আগস্টে পরীক্ষামূলক উৎপাদন ডিসেম্বরে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৪  

পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগামী আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে নতুন কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে। 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট।

এই কেন্দ্রের দুই কিলোমিটার উত্তরে রামনাবাদ নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।আগামী জুলাই মাসে পিজিসিবি থেকে ব্যাকফিড পাওয়ার পেলে আগস্টে কয়লাভিত্তিক নতুন এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে। ডিসেম্বরে তারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাচ্ছে। এতে পায়রা ও পটুয়াখালীর দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দুই হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

তখন দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পূরণ হবে। এ কারণে দেশের বিদ্যুত্সংকট অনেকটাই লাঘব হবে।
 
আগস্টে পরীক্ষামূলক উৎপাদন

পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার লিমিটেড বা আরপিসিএল এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেড যৌথভাবে আরপিসিএল নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) কম্পানি গঠনের মাধ্যমে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের ব্যয় দুটি দেশের সমান অংশীদারিতে হচ্ছে। প্রকল্পটিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন বিদেশি এবং পাঁচ হাজার  বাংলাদেশিসহ ছয় হাজার ৫০০ জন কর্মী কাজ করছেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, চলতি বছর মে পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ব্যাকফিড পাওয়ার গেলে আগস্টে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে। পর্যায়ক্রমে অপর ইউনিটটি ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসবে।

তখন এই কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশই পূরণ হবে পায়রা সমুদ্রবন্দর লাগোয়া এই দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
 
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিবেশবান্ধব

পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২২০ মিটার বা ৭৫ তলা ভবনের সমান উচ্চতার চিমনি নির্মাণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নির্গত ধোঁয়া বাতাসের নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছাবে। এতে দূষণ নিয়ন্ত্রিত মাত্রার মধ্যে থাকবে।

সর্বাধুনিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। কয়লাকে বয়লারে পুড়িয়ে ৬০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ও ২৭ মেগাপ্যাসকেল চাপে বাষ্প উৎপন্ন করা হবে। বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে।

পরিবেশবান্ধব আধুনিক সব প্রক্রিয়া মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের ফলে ৯৯ শতাংশ ফ্লাই অ্যাশ আটকানোর সক্ষমতা রয়েছে ইএসপির মাধ্যমে। কয়লা থেকে ফ্লাই অ্যাশ ও বটম অ্যাশ দুই ধরনের ছাই পাওয়া যাবে। এসব ছাই একটি দেশীয় কম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে। ছাই সংরক্ষণে প্রায় ৭৫ একর আয়তনের ডাম্পিং জোন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ হয়ে জাতীয় গ্রিডে যাবে বিদ্যুৎ

পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ জন্য বরগুনার আমতলীতে সুইচিং স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমতলী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি লাইনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখান থেকে ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ গোপালগঞ্জ সাবস্টেশনে পৌঁছাবে। পরে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ যুক্ত হয়ে ঢাকায় আসবে। এই সুইচিং স্টেশনের নির্মাণকাজও ৯২ শতাংশ শেষ।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আসবে কয়লা

পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে সমুদ্রবন্দরে চাপ বাড়বে কয়লার জাহাজের। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মীয়মাণ জেটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জেটিতে বসানোর জন্য চীন থেকে আনা হয়েছে বিশাল দুটি শিপ আনলোডার।

প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ২৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসব আনলোডার দিয়ে জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করা হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আনলোডার দিয়ে পটুয়াখালী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাজ থেকে খালাস করা যাবে। 

দুটি ইউনিটে দৈনিক প্রায় ১২ হাজার টন কয়লা ব্যবহার হবে। সেই হিসাবে বছরে ৪০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা লাগবে। কয়লা মজুদে দুটি কোল ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে ৬০ দিনের কয়লা মজুদ রাখা যাবে। প্রতিটি কোল ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৩.৫ লাখ টন। প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা