• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ ৬ দফা সুপারিশ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৪  

ভিসাসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও প্রায় ১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার ব্যর্থতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ছয় দফা সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া সুপারিশের আলোকে এরই মধ্যে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হাসান দোলনের বেঞ্চে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আজ মঙ্গলবার হাইকোর্ট এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেছেন। আদালতে শুনানিকালে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় এবং রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ।

এর আগে গত ৩০ জুন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে না পারার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব, পুলিশের আইজি এবং বায়রা মহাসচিবকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশ অনুযায়ী গতকাল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এতে বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা সব তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত ফল ও সুপারিশ করে।

সুপারিশগুলো হচ্ছে—কর্মী প্রেরণের ব্যর্থতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। যেসব কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি, তাদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ অবিলম্বে ফেরত দিতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ প্রদান। রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার বেশি গ্রহণের অভিযোগ আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি করা। ভবিষ্যতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে মিল রেখে চাহিদাপত্র ও ভিসা ইস্যুর তারিখ নির্ধারণ করা। মোবাইল ফোন, হোয়াটস অ্যাপ, ইমেইল ও সরাসরি মন্ত্রণালয়ে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে অভিযোগকারী কর্তৃক পাঠানো ডকুমেন্ট ও অভিযোগের তালিকা মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রেরণ করা।

এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ রকম পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কেও মতামত দেয় তদন্ত কমিটি। সেগুলো হলো—মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের বিধান সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে সব রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী নিয়োগের সুযোগ পায়। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা, যাতে চাহিদাপত্র ইস্যু থেকে কর্মীর বিদেশ গমন ও পরবর্তী পরিস্থিতি তদারকি করা যায়। এই পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং রিক্রুটিং এজেন্সি সংযুক্ত থাকতে পারে। মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ অনুমতি গ্রহণের পর বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণ এবং কর্মী প্রেরণের সময় নির্দিষ্ট করা। রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে অভিবাসন ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। ই-ভিসা প্রাপ্ত যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি, তাদের বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সে দেশের সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা।

তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে গৃহীত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে—যেসব কর্মী ই-ভিসা এবং বহির্গমন ছাড়পত্র সংগ্রহ করার পরও মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে কারণ দর্শানো হয়েছে। এ ছাড়া গমনেচ্ছু যেসব কর্মী তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন, তাদের সব ধরনের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিপূর্বক প্রমাণসহ আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে অবহিতকরণে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত ৩ জুলাই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থারও প্রধান, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বায়রার নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মালিকদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়—মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের থেকে নেওয়া সমুদয় অর্থ আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ফেরত প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

জানা যায়, গত ৩১ মে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী পাঠানোর শেষ দিন ছিল। বিমানের টিকিট সংকটসহ নানা কারণে বাংলাদেশ থেকে শেষ দিনে যেতে পারেনি প্রায় ১৭ হাজার কর্মী। যাদের বিএমইটির ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সসহ যাবতীয় কাগজপত্র ও পদ্ধতি সম্পন্ন ছিল। এতে শোরগোল পড়ে যায়। এ বিষয়ে পরদিন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

গত ২ জুন ‘৩০ হাজার যুবকের স্বপ্ন ভেঙে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

আজকের খুলনা