• সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৩ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

পাঁচ বছরে নেই ৪ হাজার হেক্টর চিংড়ি ঘের

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৪  

খুলনার ৯ উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মিঠা ও লবণপানি মিলিয়ে চিংড়ি ঘের ছিল ৫৬ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থবছরে সেই ঘেরের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৯৯ হেক্টরে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে জেলায় চিংড়ি ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর। এতে উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানির পরিমাণও কমেছে সাদা সোনাখ্যাত পণ্যটির।

জেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় ৩৬ হাজার ১৫১ হেক্টর জমিতে লবণপানির বাগদা চিংড়ির ঘেরে উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৫৯০ টন। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৩৮৩ হেক্টর ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৬৪ টন চিংড়ি। সেই হিসাবে ৩ হাজার ১৫৩ হেক্টর ঘের এবং ১ হাজার ৩২৬ টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন কমেছে।
এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় মিঠাপানির গলদা চিংড়ির ঘের ছিল ২০ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৫৮৪ টন। চলতি অর্থবছরে ১৯ হাজার ১৬ হেক্টর জমির ঘেরে উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ১৫৮ টন চিংড়ি। সেই হিসাবে ১ হাজার ১৮ হেক্টর ঘের এবং ২ হাজার ৪২৬ টন উৎপাদন কমেছে।

স্থানীয় চিংড়িচাষিরা জানান, কয়েকটি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং বেড়িবাঁধ থেকে পাইপ অপসারণ করায় অনেক এলাকায় চাষিরা ঘেরে লবণপানি ঢোকাতে পারছেন না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি কমেছে লবণপানির ঘের। এ ছাড়া পুঁজি সংকট, ভাইরাস ও দাপদাহে মড়কের কারণেও অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। কিছু ঘেরের জমিতে উঠেছে ঘরবাড়ি। পতিত রয়েছে অনেক জমি। 
কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামের আলমগীর হোসেন নিজের ৫ বিঘা জমিতে প্রায় ১০ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। বেড়িবাঁধের নিচে পাইপ বসিয়ে ঘেরে লবণপানি ঢোকাতেন তিনি। তবে চলতি বছর বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় সেই পাইপ অপসারণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে আলমগীরের পাশাপাশি ওই এলাকার সব ঘেরে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে।

আলমগীর বলেন, আগে জমিতে বছরে একবার আমন ধান চাষ করতাম। কিন্তু মাটিতে লবণাক্ততার কারণে ধান উৎপাদন ভালো হতো না। এ কারণে চিংড়ি চাষ শুরু করি। ভালোই লাভ হতো। কিন্তু এখন চিংড়ি চাষ করতে না পারায় কী করব ভেবে পাচ্ছি না। এ গ্রামের অর্ধশত চিংড়িচাষি বেকার হয়ে পড়েছেন।
পাশের মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের মঞ্জুর আলম বলেন, জমি যে পরিমাণ লবণাক্ত তাতে ধান বা অন্য ফসল ভালো হয় না। এখন ঘেরে লবণপানি তুলতে না পারায় চিংড়ি চাষও বন্ধ হয়ে গেছে। আয়-রোজগার বন্ধ। জমিও পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিকল্প কোনো উপায়ও দেখছি না।

জেলার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, খুলনার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কারখানাগুলো চাহিদা অনুযায়ী গলদা ও বাগদা চিংড়ি পাচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয় একই রয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্‌ণ হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ঘেরে লবণপানি তুলতে না পারা, নদী ভরাট, নতুন নতুন ঘরবাড়ি গড়ে ওঠা, পুঁজি সংকট, চিংড়ির মড়কসহ বিভিন্ন কারণে খুলনায় আগের তুলনায় কম জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের পাশাপাশি কমেছে রপ্তানির পরিমাণও।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা